Ads Area

দ্রৌপদীর অভিমান - রমা গুপ্ত

দ্রৌপদীর অভিমান

 রমা গুপ্ত
তারিখ- ২৩/০৬/২০২২


দ্রৌপদী সংবাদ পেলেন বিবাহ করেছেন অর্জুন সুভদ্রাকে,
রাগে দুঃখে অপমানে পড়ে রইলেন নিজ কক্ষে।

মনে মনে ভাবেন কৃষ্ণের সম্মতি ভিন্ন অর্জুনের এ কাজ করা অসম্ভব,
তবে কি এ বিয়েতে অনুমতি দিয়েছে স্বয়ং মাধব!

এমন কাজ মাধব কি করে সমর্থন করলেন,
অর্জুন বীরশ্রেষ্ঠ বলেই কি এই বিবাহ দিলেন!

দ্রৌপদীর মনে ঘনীভূত হয় অভিমান,
তবে কি মাধবের কাছে তাঁর নেই কোনো সম্মান!

নাকি ইচ্ছে করেই বোনকে তুলে দিলেন পার্থর হাতে!
পার্থর নিকট হতে কি আমার দূরত্ব বাড়াতে!

অসম্পৃক্ত ভাবনায় দ্রৌপদী আসক্ত যখন,
অর্জুন দাঁড়ালেন এসে সন্মূখে তখন।

উদভ্রান্ত বেশ অবিন্যস্ত কেশ অশ্রুসিক্ত দ্রৌপদী,
ক্রোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন অর্জুনের প্রতি।

বুঝলেন অর্জুন যাজ্ঞসেনী অগ্নিরূপ করেছেন ধারণ।
 আর সেই অগ্নির তাপে যেন জ্বলে যাচ্ছে তার দেহ মন।

জ্বলন্ত ফলার মত অস্ফুট প্রশ্নবাণ যেন বিদ্ধ করছে তাকে,
কুণ্ঠিত সঙ্কুচিত অর্জুন মৃদুস্বরে বললেন দ্রৌপদীকে।

পাঞ্চালি তুমি অগ্নি উদ্ভূতা তেজময়ী পরমা সুন্দরী ও জ্ঞানী,
তোমাকে জীবনে লাভ করে আমি নিজেকে ধন্য মানি।

কিন্তু এও মানি তোমার মত অগ্নিস্বরূপা বিশ্ববন্দিতা নারী হতে পারেনা কখনো একজনের,
সে নারী প্রেয়সী হন না, দেবী আসনে বন্দিতা।সে নারী পূজিতা সর্বজনের।

যখন আমায় জয়মালা পরিয়েছিলে আমি তোমার সেই তেজদৃপ্ত অগ্নিকে অন্তরে করেছিলাম ধারণ,
কিন্তু সেই অগ্নি যে আমাকে শুধু দগ্ধ করেছে রিক্ত করেছে, শান্তি পাইনি। 
হতে পারিনি তোমার একজন।

 তুমি যাজ্ঞসেনী তেজদৃপ্তা, অপার জ্ঞানের অধিকারী,
তোমার পবিত্রতায় আমি সম্ভ্রম বোধ করি।

পুরুষ তো চায় মুগ্ধা নারী, যে প্রতিক্ষণে তাকে মুগ্ধ করবে,
যার দুচোখে থাকবে প্রেম, হৃদয় ভরা থাকবে সুধারসে- যা দিনের শেষে সমস্ত ক্লান্তিকে ধুয়ে দেবে এক নিমেষে।

বিশ্বাস করো পাঞ্চালি তোমার পদ্মের মত দুটো চোখ আমায় সময়ে সময়ে উন্মাদ করে দেয়,
কিন্তু সেই চোখেই দিবারাত্র যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝলসাতে দেখি তাতে আমার ক্লান্তিবোধ হয়।

আমার শক্তি, বিরত্বের কীর্তি ম্লান হয়ে যায়,
তোমার তেজ সম্পন্না অস্থিত্বের কাছে নিজেকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।

তাই দূরত্বই বোধহয় আমাদের দুজনের শ্রেয়,
আর তাতেই হবে শান্তি ,প্রেম অপরিমেয়।

এও জানি সুভদ্রা কোনোদিনও পারবেনা দ্রৌপদী হতে,
সেটাই সান্ত্বনা মনে, তাই ঐ মুগ্ধা কিশোরী পেরেছে আমায় জিতে নিতে।

মুগ্ধতায় আকৃষ্ট হয়েছি আমি একান্তে শান্তির আশায়,
অভিভূত আমি তার শান্ত স্নিগ্ধ প্রেমের ধারায়।

দ্রৌপদী স্থির হয়ে শুনলেন অর্জুনের সমস্ত কথা, আর অন্তরে পেলেন অসহনীয় ব্যথা।

ক্রোধে মনে হচ্ছিল তাঁর শ্যেন পাখির মত ঝাপিয়ে পড়েন অর্জুনের বক্ষস্থান,
আর তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে বীরবক্ষ ছিন্ন করে দেখেন পার্থর হৃদয়ের কোথায় তাঁর স্থান।

কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনি হতে থাকে অর্জুনের কথাগুলি,
একি শুনছেন তৃতীয় পান্ডবের মুখে!
হতবাক দ্রৌপদী মনে ভাবেন আজ পার্থর কাছে তিনি এতটাই মূল্যহীন!

যে দ্রৌপদীর মহিমা, রূপের খ্যাতি, গুণের কদর সমস্ত রাজরাজাদের মধ্যে ব্যাপ্ত আছে,
যাঁকে জয় করতে রাজা, মহারথীগণ উদগ্ৰীব- সেই দ্রৌপদীর আজ পরাজয়!
তাও এক কিশোরীর কাছে!

দ্রৌপদী অশ্রুসিক্ত। 
এক সময়ে যত্নে আঁকা কাজলের অনেকটাই চোখের জলে ধুয়ে শীর্ণ ক্লান্ত নদীর মত কপোল বেয়ে নেমে এসেছে।
সিঁথির সিঁদুর গিয়েছে লেপ্টে, সিঁথিতে থাকা টিকলির হীরক উজ্জ্বল স্থির জ্বলজ্বল করছে।

ধীর ক্লান্ত পায়ে দ্রৌপদী এসে দাঁড়ালেন অর্জুনের কাছে,
অর্জুনের চোখে চোখ রেখে করুণ স্বরে বললেন, আমি তবে কার পার্থ! 
পাঞ্চালি কি আজ এতটাই মূল্যহীন তোমার কাছে?

অর্জুন কোনো উত্তর দিতে পারলেন না দ্রৌপদীরে,
চুপ থেকে অপরাধীর মত ফিরে এলেন সুভদ্রার ঘরে।

অবসাদে অবসন্ন দ্রৌপদী ব্যথিত হৃদয়ে বসে রইলেন একাকী কক্ষে,
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ চীৎকার করে বলে উঠলেন তবে আমি কার! 
ভূলুণ্ঠিত হয়ে রইলেন অশ্রুসিক্ত চোখে।

অন্ধকার কক্ষে দ্রৌপদী একাকী আলুথালু প্রায়,
ক্ষণকাল পরে এলেন কৃষ্ণ, হলেন সহায়।

বাঁশির মধুর ধ্বনি ভেসে আসে কক্ষে, 
হতোদ্যম দ্রৌপদী তাকান অন্ধকারে,
বদনে অবিন্যস্ত ছড়ানো কেশের আড়াল থেকে খুঁজতে থাকেন মাধবেরে।

শুনতে পেলেন সখার পরিচিত কণ্ঠস্বর,
অন্ধকার কক্ষে দেখলেন মাধবের জ্যোতির্ময় কলেবর।
রমা গুপ্ত

কৃষ্ণ এসে দাঁড়িয়ে আছেন সন্মূখে যে তার,
বললেন ওঠো কৃষ্ণা , করো রাগ পরিহার।
ধৈর্য ধরো সংযত হও হয়োনা বেসামাল,
মহাকাব্যের নায়িকা যে তুমি,
তোমা দ্বারা নবরূপে ইতিহাস রচিবে যে মহাকাল।

দ্রৌপদী স্থির নিশ্চুপ, অসহনীয় তাঁর হৃদি ব্যথা ভার,
হেসে বললেন কৃষ্ণ, ক‌ষ্ণা জানো তুমি কার?

তুমি যে সর্বকালের, অসীমের, তুমি অগ্নির,
আর যে নারী অনন্তের ধন- সে তো কৃষ্ণের। তাইতো তুমি আমার।
    শুধুই আমার।
Attachments area

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Area