চারকোণা ঘর, সারিবদ্ধ ব্রেঞ্চ, হোয়াইট বোর্ড- সেটা একটা ক্লাসরুম।
দুই তিনে ছয় - কিভাবে হয়?
শিখতে এসে একদিন হঠাৎ পরিচয়- পরে পরিণয়। আগ বাড়িয়ে আমিই বোধহয় জিজ্ঞেস করেছিলাম- কে তুমি নস্টালজিয়া? আমি তখন স্নাতক শেষ বর্ষে ; তুমি নবীন। সামান্য হেসে উত্তর দিয়েছিলে গৌরী। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম, তুমি ম্যাথ পারতে না, আমাদের রহমান স্যার ম্যাথ খুব ভালো পড়ান। মুখে খোঁচা-খোঁচা দাড়ী, ঠিক অঞ্জনদত্তের মতোন। তোমাকে তার কাছে নিয়ে গেলাম, স্যার বয়সে একেবারে তরুণ- ব্যাচেলর। তোমার সুগঠিত শরীর, রক্তাক্ত ঠোঁট,হাসান রোকন |
আর চোখের সারল্য দেখে স্যারও বোধহয় উন্মাদ হয়েছিলেন-
নয়তো স্যারের পকেটে, বুক শেলফে, ফোনের কাভারে তোমার ছবি থাকবে কেন?
কেন শুক্রবার ছুটির দিনেও স্যার তোমাকে পড়তে ডাকবেন?
.
বিষয়টা আমি জানতাম না,
তোমার বন্ধু ফাহমিদ আমাকে বললো- বিশ্বাস করো গৌরী, আমার হঠাৎ রক্তের নেশা পেয়ে গেল।
তোমাকে ফোন করলাম- তুমি ধরলে না।
মাথা আরো গরম হয়ে গেল- যতটা গরমে লোহা পুড়ে যায়।
পকেটে একটা ছুড়ি নিয়ে ছুটলাম স্যারের ঠিকানায়- স্যার তখনও পড়াচ্ছেন।
হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো- হ্যালো...
হ্যা সুমন- বল।
গ্রুপে আয়, দেখ রেজাল্ট দিয়েছে।
কি বলিস, কখন?
এই কিছুক্ষণ আগেই।
কার কি খবর?
জানি না রে, তবে তিতলী কাঁদছে ভিষণ।
কেন, তিতলী কাঁদছে কেন?
তোর মনে আছে, ম্যাথ পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আমরা যখন হইচই করে চা খাচ্ছিলাম- তিতলী মুখ ভার করে চলে গিয়েছিলা, কথা বলে নি!
তুই তো বললি, কিরে তিতলী চলে যাচ্ছিস যে?
পরীক্ষা ভালো হয় নি? ম্যাথে ওর ফেইল এসেছে।
.
আমার তখন আবারো মনে হলো- রহমান স্যার খুব ভালো ম্যাথ পড়ান।
প্রতি বছর যে কতশত ছেলে-মেয়ে ম্যাথে ফেইল করে মৃত্যু বেছে নেয়।
জানি তো হিসেবটা কঠিন।
তাই আর স্বপ্নের হত্যা নয়- প্রত্যাবর্তন।
চোখেমুখে লেকের জল ছিটিয়ে নিভিয়ে দিলাম আগুন।
এরপর আবার একদিন- তোমাকে ফোনে না পেয়ে রহমান স্যারকে ফোন করলাম,
তিনিও ফোনে কথা বলছেন।
রাগ হলো খুব! হাতের ফোনটা আছড়ে ভাঙ্গলাম।
কদিন আর কোথাও গেলাম না, কারোর কোনো খোঁজ নিলাম না,
কে কেমন আছে, তুমি কেমন আছো, কি করছো, রহমান স্যার কি করছেন, কিছুই না।
তুমিই ফোন করলে, কিছুক্ষণ কিছুই বললে না,
তারপর বললে- একটি কথা, গোপন সত্য- আমার বিয়ে।
ঠিক তখন নৈঃশব্দের নৌকা ডুবে গেল-প্লাবনে।
নৈঃশব্দের নৌকা ডুবিয়ে দিলেন আমাদের রহমান স্যার।
যিনি ম্যাথ খুব ভালো পড়ান।
ভেঙে যাওয়া ঘর, ভাসমান পানা,
নিমজ্জিত ধানক্ষেত - আমাকে ক্ষমা করো।
বিশ্বাসের চাদর যাকে পরিয়ে দিয়েছিলাম,
শুদ্ধতার আদরে যাকে ভরিয়ে দিয়েছিলাম,
থই থই নদীর মতোন- আজ সে বিগত হয়েছে।
আজ তার বাসরের লাল শাড়ী,
লাল আলতায় রাঙানো পা।
ভালো থেকো গৌরী....
আমাকে নিয়ে ভেবো না,
ভেবো না তোমাকে না পেয়ে মরে গেছি,
হৃদয়ের রক্তপাতে মরে গেছি,
কাঁদতে-কাঁদতে মরে গেছি,
শীতকালীন সন্ধ্যার মতোন।
গৌরী- রহমান স্যার,
আমাদের রহমান স্যার ম্যাথ খুব ভালো পড়ান।
কবিতাঃ 'রহমান স্যার'
__
হাসান রোকন
হাসান রোকন
ধন্যবাদ কবিতা পাড়া
উত্তরমুছুন