কেউ কথা রাখে না এঞ্জেল অঙ্কনা সিংহ --- শরৎকাল, আশ্বিনের শুক্লপক্ষের শেষলগ্ন, আকাশে বাতাসে আগমনী সুরের ছোঁয়া, দিগন্তের নীল দরিয়ায় ভাসমান, পেঁজাতুলো সাদা মেঘের ভেলা, আমার মন ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুদূরে, মৃদুমন্দ সমীরণ হৃদয়ের কাশের বনে, হালকা দোলা জাগিয়ে যায়, অষ্টমীর ভোররাতে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেল, পুব আকাশে উদিত রক্তিম রবি, পূর্বাভাস দিল সমুজ্জ্বল দিনক্ষণের। অবগাহনের পর পুষ্পাঞ্জলীর উদ্দেশ্যে, মায়ের টুকটুকে লালপেড়ে বেনারসীটা পরে, ডানাকাটা পরীর মতো, চারিদিকে উড়ে বেড়াচ্ছিলাম। ভ্যাবলাকান্তের মতো লাজুক নয়নে, মন্ডপের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল ও, মাঝেমাঝে চোখাচোখি হলেই, লাজে মুখটা নামিয়ে নিচ্ছিল। মন ভরা অনাবিল খুশি, একই গ্রামে বাড়ী, আমার চেয়ে দু’ক্লাশের বড়, তখন আমার নাইন। মন মজেছিল তোমাতে, সেই পথ চলা শুরু, তারপর কতবার গেছি নীল দিগন্তের ওই পারে, সাত-সমুদ্র তের নদীর ধারে, হাতে হাত রেখে কত গল্প করেছি, কতো মালা গেঁথে ছিলাম মনে মনে, হাসনুহানার সুগন্ধে ভরিয়ে দিয়েছিলে তুমি আমার জীবন, পলাশের রঙে প্রাণ ছিল মাতোয়ারা। কত রাত জাগা, কত স্বপ্ন দেখা, জীবনডালি সাজানো ছিল তোমারই জন্য, তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবো বলে। সব স্বপ্ন আজ চূর্ণ-বিচূর্ণ, ক্ষত-বিক্ষত, বিদীর্ণ, ঝরে গেছে শুকনো ফুলের পাপড়ির মতো, তুমি ভালো থেকো, শুধু মন থেকে আমার ছবিটা মুছে দিও, চিরকালের জন্য। কৃষ্ণ কবিয়াল বলেছেন, ''কেউ কথা রাখে না।'' সত্যি, তুমিও কথা রাখোনি। --- |