কবিতা - দুর্বাসার বর কলমে- রমা গুপ্ত তারিখ - ০৫/০৭/২০২২ এসেছে দুর্বাসা কুন্তিভোজ নগর সেবা দাও বলে ডাকেন উচ্চস্বর। মন্ত্রী শশব্যস্ত বার্তা দিলেন কুন্তিভোজে, দুর্বাসা এসেছেন হেথা আশ্রয়ের খোঁজে। রাজা হন চিন্তাগ্ৰস্ত কি হবে এবার, এ মুনি সহজ নয় ক্রোধ যে দুর্বার। সেবা ত্রুটি হলে পরে রক্ষা নাই আর, অভিশাপে বিনাশ হবে রাজ্যপাট তার। রাজকার্য যা ছিল ফেলে সমস্ত, সত্বর এলেন রাজা হলেন ব্যস্ত। হস্ত পদ ধুয়ে বললেন মুনিবর, থাকতে চান হেথা প্রায় এক বৎসর। ইচ্ছামত করব কর্ম থাকব স্বাধীন, দিও শুধু এক সেবক আমার অধীন। সেবা হেতু যা কিছু বলবো যখন, পাঠিয়ে দিও তা হয়ে সযতন। ভোজরাজ ভীতত্রস্ত, কি হবে উপায়, দিশেহারা হন রাজা, হন নিরুপায়। হেনকালে কুন্তি এসে জানায় পিতারে, চিন্তা করো না আমি সেবিব মুনিরে। কুন্তিভোজ বলেন পুত্রি জানো নাকো তারে, ত্রুটিমাত্র হলে মুনি শাপিবে তোমারে। কুন্তি বলেন পিতা শান্ত হোন এই ক্ষণে, ত্রুটি না হবে সেবায় নিশ্চিত জানি মনে। মুনি কাছে কুন্তি গিয়ে বলেন তখন, আপনার সেবা আমি করব যতন। মুনিকে নিয়ে কুন্তি এলেন একটি ঘরে, সাজিয়ে দিলেন দ্রব্য নানা উপাচারে। যত্ন করে পাতেন আসন, শয্যার বিছানা, জল ফল ভোজ্যদ্রব্য বসন কয়খানা। তারপর করজোড়ে বিনতির সুরে, বললেন কুন্তি তবে দুর্বাসা মুনিরে। দ্বার বাইরে সদা আমি থাকবো উপবিষ্ট, সেবা লাগি বলবেন যা থাকে অবশিষ্ট। এইভাবে কুন্তি সদা করেন সেবাব্রত, দুর্বাসাও পরীক্ষা ছলে করেন বিস্তর বিব্রত। একে একে পরীক্ষায় জয় হলেন কুন্তি, দুর্বাসারও মনে তাতে বড়ই প্রশান্তি। এইভাবে সময়কালে বছর হলো পূর্ণ, বিদায় নেবেন মুনি কুন্তি বিষন্ন। কুন্তিকে স্নেহ সুরে বললেন মুনি, তুমি হলে ভক্তিমতি সুশীলা রমণী। তোমার সেবায় আমি হয়েছি যে প্রীত, বর তুমি নাও চেয়ে দেবো মনোমত। করজোড়ে বলেন কুন্তি বর নাহি চাই, সেবায় হয়েছেন সন্তুষ্ট খুশি আমি তাই। ভোজ রাজ্যে চরণধূলি পড়েছে আপনার, তাতেই রাজ্য কল্যাণ, এটাই বর আমার। প্রসন্ন হয়ে মুনি বলেন কুন্তিরে, এই একটি মন্ত্র নাও, দিলাম তোমারে। যত্ন করে সারাজীবন রাখলে স্মরণ, মন্ত্রবলে মনোবাঞ্ছা হবে যে পূরণ। এই মন্ত্রবলে তুমি পছন্দ মতন, যে দেবতারে করবে স্মরণ আসবে তখন। মনে মনে চাও যদি তাঁর মত সন্তান শক্তিধর, অমনি লভিবে তুমি সে সন্তান সত্বর। এই বলে মুনি তবে নিলেন বিদায়, রাজা প্রজা মন্ত্রী সবে পেলেন স্বস্তি তায়। একদিন ভোরে কুন্তি গিয়ে গঙ্গাস্নানে, অর্ঘ্য দিয়ে পূজিলেন সূর্য নারায়ণে। অকস্মাৎ স্মরণে এলো দুর্বাসার বর, পরীক্ষা হেতু মন্ত্র উচ্চারণ করলেন সত্বর। অমনি সন্মূখে এসে সূর্যনারায়ণ, সমর্পিল হস্তেতে তাঁর কাঙ্খিত পুত্রধন। ভয়ে বিস্ময়ে কুন্তি বলেন এ যে বিষম দায়, আমি যে কুমারী দেব কি হবে উপায়। লোকলজ্জা হেতু আমি নেবো না এ দান, আমি যে রাজকন্যা আমার না রবে মান। ভুল বুঝে মন্ত্র পাঠের এ কি পরিণাম, কলঙ্কিত হবে মোর পিতার সম্মান। কুন্তি তুমি কুমারী! বিস্মিত সূর্য নারায়ণ, তবে কেন করলে বাঞ্ছা পুত্রতপোধন! হায়। এখন এ সন্তান ফিরাবো কেমনে, কাঙ্খিত ধন ফিরালে দগ্ধিবে জীবনে। একবার যদি কিছু করা হয় দান, ফিরায়ে দিলে হয় দানীর অপমান। আমার শক্তিতে সৃষ্ট এ বীর সন্তান, আমারই কবচ কুন্ডল রক্ষিবে তার প্রাণ। জানবে সে মহাবীর নাম হবে কর্ণ, জগতে মহান হবে দান হবে ধর্ম। এই বলে সূর্য নারায়ণ হলেন অন্তর্হিত, একলা কুন্তি সন্তান কোলে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত। কিংকর্তব্যবিমূঢ় কুন্তি ভাসছেন অশ্রুজলে, মনস্থির করে শেষে অশ্রু মোছেন আঁচলে। গঙ্গার অদূরে দেখেন নলিনীর দল, সেথা হতে কুন্তি পদ্ম তুলিলেন সকল। সন্তান রাখেন তাতে যতনে সাজায়ে। অনেক আদর করে সাশ্রু নয়নে, ভাসিয়ে দিলেন তারে অতি সযতনে। ভুলের কলঙ্ক হতে এভাবে নিস্তার, গোপনেই রইলো মনে সে ব্যাথার ভার। |