গড়ে তোল্ বিপ্লব মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ওরে ও নবীন যাত্রী - তাই বলে কি পথ চলবি না? বাতিলের চপেটাঘাত- হৃদ মাঝে তোর করবে আঘাত তাই বলে কি হক বলবি না? ঘুনে ধরা সমাজে- জাতি খায় হাবুডুবু, পথ আজ কণ্টকাকীর্ণ। মাড়িয়ে সেই পথ- নিয়ে প্রাণে দৃপ্ত শপথ, সব বাঁধা করে চল, দীর্ণ-বিদীর্ণ। মায়াজালের শৃঙ্খল, পেল্ রে পদতল— প্রসারিত করে দে তোর দু'বাহু । যেথা যেই প্রান্তরে, ক্রন্দসী ডাকে তোরে— সেথা ছুট ভুলে তুই অন্ধ-রাহু! নিপীড়িত-মজলুম, চোখে যার নেই ঘুম, মাথায় তার, রাখ্ তোর শান্তির হাত মজুরের দুটি চোখে, কষ্টে যদি অশ্রু ফোটে— ভাঙরে তবে সেই, জুলুমের প্রাসাদ। নারীর অলংকার – হয় যদি সংহার প্রাণ যদি যায় তার অকালে। স্ত্রী - মা- বোন, প্রাণের প্রিয়জন খুনে তার বুক-পিঠ রাঙালে। ক্ষুধাতুর দুটি চোখে, হাহাকার ফোটায় বুকে, ছলছল আঁখিযুগল তাকিয়ে। সাধ্য তোর আছে যা, পুঁজি কর-রে তা, দে-না সহায়তার হাত দুটি বাড়িয়ে। খুনরাঙা দেখে পথ, থামাবি কেন-রে রথ? লক্ষ্য তো নয় তোর থামবার। ডাকে তোরে মহা রব, বিলিয়ে দে তোর সব, ধর্মনীর ধপাধপ নয় তোর দমবার। দুরু দুরু বুক যদি- দেয় তোরে পিছু ডাক, মেলে দেয় পথে তোর মরিচীকা অশনি সংকেতে থাকুক না কান পেতে তুলে ধর দাবানলের অগ্নিশিখা। থরে থরে মুক্তা- হীরার মায়া মহল দেয় যদি চোখ তোর ধাঁধিয়ে। সাধুবেশী চাটুকার- বেঈমান-গাদ্দার, পথে দেবে শত গোল বাঁধিয়ে। হিমালয়-এভারেস্ট, তিব্বত-সাহারা, বন্ধক হবে তোর চলাতে। নিম আর চিরতা, বাড়াবে জড়তা নতুনের মাঝে হক বলাতে। আটলান্টিক-প্রশান্ত, উত্তাল-অশান্ত গর্জে রুষিবে ফেনিল সলিল। বিষণ্ন তোর মন- নেই বলে রবির কিরণ আঁধারে ছেয়ে গেছে আকাশ সুনীল। ফণী আর বুলবুল, দেখাবে ঐ পথ ভুল, ধ্বংসের তাণ্ডবে, বিষাবে তোর মন। ঘন কুয়াশার মাঝে, যেন তোর রথ সাজে ভাবিস-না আসবে-কি এক্ষুণি মরণ। নরপিশাচের হাত যেথা, সর্বগ্রাসী পাতা ছুটে চল্ তুই সেই রাজ্যে। বৈশাখীর নাচ দেখা, যদি ও তুই একা, বিজয় কেতন উড়া, ধৈর্যের অতিশায্যে। সহায়তার কথা বলে, স্বার্থ-সন্ধানে চলে, পাপিষ্ঠ এরা সেই মুনাফিক-বাটপার। পরেছে সাধুর ভূষণ, করেছে রক্ত দূষণ, শিরায় বইছে এদের মীর জাফর-হিটলার। চলনা-চাতুরী, ছড়াবে ফুল মাধুরী, করিস না তবু তুই সন্ধি। রক্তচোষা জোঁক, টুটি চেপে জিব্ ছিড়ে, মুক্ত করে নে, অসহায় বন্দি। হিস্ হিস্ ফিস্ ফিস্, উঠিবে বিষাক্ত শিশ্, ফণা তুলে-পথ বেয়ে, আসছে গোখরা। বিষে প্রাণ ছেয়ে যাবে— সেই বিষের প্রতিঘাতে, বিকৃত রূপ ধরে, পালাচ্ছে দেখ ওরা। জালিমের কারাগার, করে দে আঙ্গার, বিনা দোষে মানবতা কাঁদে যেথা যুগভর। ন্যায়ের দণ্ড, দিলে রায় ভণ্ড, প্রতিবাদী অনলে, পুড়িয়ে ভষ্ম কর। কাঁদে যদি সখিনা— পেটে ভাত জুটেনা, ঔষধ-পথ্য, নেই তার ঘরেতে। শান্তির দূত হয়ে, পাশে দাঁড়া তুই গিয়ে, অশ্রু-নে তোর, আঁচলের পরতে। অধিকার জাগাতে- নব ধরা রাঙাতে, বিদ্যুৎ চমকানো, দেখা তুই বাজিমাৎ। শান্তির দূত তুই, ঝড় বেগে ধেয়ে চল্, রুখে তোর পথ চলা, আছে কার হিম্মৎ। ক্লান্তি-শ্রান্তি, অসারতা-ভ্রান্তি, সব ছেড়ে আয় তুই, শান্তির পূজারী। ভাঙা মন-সারক্ষণ, করে যায় অনশন, জাতির ঐ ভাঙা তরী চায় তোকে কাণ্ডারী । বিপ্লবী পাখি তুই- ডানা মেলে চেয়ে দেখ, দীনতায়-হীনতায়, কি হাল জনতার। ঝর্ণার স্রোতধারা, অগণিত চোখ ভরা, হতাশার লোনাজল, ছেয়ে আছে চারিধার। তবে তোর কেন দেরী? বাজারে রণ ভেরী, ভেঙে দে বাতিলের কালো দুটি হাত। তুই যদি পাস্ ভয়, দেখাবে কে জয়, আনবে কে বল্, সোনালী প্রভাত। অন্যায়-অবিচার, জুলুম-পাপাচার, আপোষহীন নেত্রে, ঘুচে দে-তুই সব। বিপ্লব ! বিপ্লব! গড়ে তোল্ বিপ্লব, সবখানে সবজনে ছড়া তার কলরব। উন্মুখ জনতা- শোনাবে জয়গান, সেই আশা কভু তুমি করো না। অমর নায়ক হবে, মহৎ বলবে সবে, এই আশা কবু তুমি পুষো-না। জনতার বারতা, নির্লোভ-নির্ভয়, যেই দিন ধ্বনিবে। মরে ও অমর তুমি, ধন্য-পূণ্য-ভূমি, জনতায় আছো তুমি— তোমার ঐ আত্মা শুনিবে। (সমাপ্ত) কাব্যগ্রন্থ (গড়ে তোল্ বিপ্লব) |