আফসোস
©অঞ্জলি দে নন্দী, মম
আফসোস তো সবাই করে।
জলের জীব ভাবে,
কবে যে সে উড়ে যাবে।
সে আফসোস করে -
কেনো যে জলের জীব হয়ে জন্ম নিলাম!
আকাশের উড়ন্ত জীব ভাবে,
কবে যে বাসায় বসে বসেই খাবার পাবে!
রোজ রোজ আর খাবারের জন্য উড়তে চাই না।
মেঘ ভাবে,
![]() |
অঞ্জলি দে নন্দী |
বেশ তো সাগরের বুকে ছিলাম,
কেনো যে নিচু থেকে উঁচুতে এলাম!
সেই তো আবার বৃষ্টি হয়ে নিচেই যেতে হবে!
কেনো শুধু শুধু নিচ থেকে ওপরে উঠলাম তবে!
কি সুখই পেলাম?
মানুষ ভাবে,
কেনো যা চাই তা-ই পাই না?
.
কিনারায়
©অঞ্জলি দে নন্দী, মম
আমার বয়স এখন আশি।
জীবনকে আমি বড় ভালোবাসি।
কিনারায় এসে বুঝি আজ
সারা হয় নি আজও আসল কাজ।
এতো বছর ধরে শুধু টাকাই চেয়েছি।
হয় তো তা চাওয়ার থেকেও বেশিই পেয়েছি।
কিন্তু করা হয় না শুধু নিজেকে আবিষ্কার করা।
হ্যাঁ, যে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে এ প্রাণ গড়া,
হয় নি তো তাদেরকে জয় করা।
এখনও তো আমার ওসব অঙ্গ
দিচ্ছে লোভকে সঙ্গ।
আজও চা সঠিক সময়ে না পেলে
দেহ অস্থির হয়ে ওঠে, নেশার টানে।
আজও আমার সিন্দুকের চাবি ঘরে ফেলে
কোথাও যাই না, আমি বাইরের পানে।
সব সময় ওটি সঙ্গেই রাখি।
এখনও ঈশ্বরের পায়ে নিজেকে দিতে পারি নি।
এখনও পার্থিব আশক্তিতে ডুবে থাকি।
মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারি নি।
তবে আমার মাথার নীচে গীতা রাখি আমি।
রোজ রাতে ঘুমনোর আগে বলি,
হে জীবন স্বামী, অন্তর্যামী!
তোমার দয়ার আগুনে যেন মৃতদেহ হয়ে জ্বলি!
নিজাত্মাকে তোমার শ্রীপদে যেন দিই অঞ্জলি।
.
আসা-যাওয়া
©অঞ্জলি দে নন্দী, মম
এ পৃথিবীর বুকে
চলছে কেবলই আসা-যাওয়া।
জীবন জন্মায় সুখে।
পৌঁছয় মৃত্যুর মুখে।
মাঝের সময়টুকুতে সামান্য চাওয়া-পাওয়া।
দেহের অভ্যন্তরের একটুখানি হাওয়া,
শুধু এরই আসা-যাওয়া, এই তো বাঁচার কারণ।
কিন্তু এ যে মানে না প্রাণের বারণ;
নিজের ইচ্ছামত এর বেরিয়ে যাওয়া।
আর শরীরে এর ফিরে না আসা।
ক্রিয়াহীন নাসা; বৃথা হয় অপেক্ষার আশা।
জীবনের প্রতি এর যে ছিলই না ভালোবাসা।
নবরূপে জগতে বার বার বার
এই আসা, আর ফের চলে যাওয়া, এ তো অনন্ত।
এ তো নয় কভুই থামবার।
এই আসা-যাওয়ার জন্যই তো প্রাণ-প্রবাহ চলন্ত।
.
কোথায়?
©অঞ্জলি দে নন্দী, মম
মরীচিকা খোঁজে জলাশয়।
বালি-পথের যে প্রাণ সংশয়।
সুদূরের সূর্য হাসে।
লু বয় বাতাসে।
প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপ।
তবুও মানুষ কেন চুপ?
হায়! - শক্তি তার কোথায় আছে?
আকাশে মেঘ এনে বৃষ্টি নামায়,
এমন ক্ষমতা কি আছে তার কাছে?
রোদের অতি প্রখরতা, লু-এর প্রাবল্য থামায়।
আরও আছে, ঝড়, বন্যা, ভূকম্প কত, কতই...
মনুষ্য নিজেকে শক্তিশালী মনে করুক যতই,
তবুও তাকে প্রকৃতির শক্তির কাছে
চুপ থাকতে হবে, অসহায়ের মতই।
পি এক্সটেনশন।
মোহন গার্ডেন।
উত্তমনগর।
দিল্লী - ১১০০৫৯