Ads Area

ছাপোষা মানুষ - ফুয়াদ স্বনম

"ছাপোষা মানুষ" ___________
ফুয়াদ স্বনম
কেটে পড়ো, নইলে শনি আছে কপালে। দিব্যি দিয়ে বলুন তো দাদা, আজ্ঞে হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকে, মানে এই আপনাদেরকেই বলছি। কতবার শুনেছেন এই কথাটা, বলুন তো? সামনে থেকে শুনেছেন যতবার, ভেতর থেকে লক্ষাধিকবার তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। নইলে, রোজ ন্যুব্জ চিত্তে এমন করে ঘরে ফেরা কেন! আরে মশাই, আপনি তো ফিরবেন বীরবেশে ঢাক-ঢোল-সানাই বাজিয়ে।। এই যে ধরুন, রাস্তায় সেদিন হুপিংকাশির রুগীটা দম ছাড়লো, ভাবলেন, "কেটে পড়ি, নইলে শনি আছে কপালে।" আর কেনই বা যাবেন সৎকার করতে? দেশে কি আঞ্জুমান মুফিদুল টাইপস প্রতিষ্ঠান নেই? এ খাতের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা তাহলে কই যায়? আচ্ছা ধরুন, আনতে বলেছে পাকা পেঁপে, বাঙ্গি তুলে এনেছেন বাজার ঘেঁটে। গিন্নী গিয়েছে চটে ভীষণ তেলেবেগুনে আপনার রাগটি তুলছে ওই অনাথ কাজের মেয়েটার গায়ে, কি ভাবছেন মশাই?- "কেটে পড়ো, নইলে শনি আছে কপালে?" আর কেনই বা যাবেন তাকে বাঁচাতে, বলুন তো? কোনোদিন, কখনো তো জানতেই পারেননি যে আপনার মধ্যে মেয়েটি নিজের বাবাকে খুঁজে ফেরে! চড়েছেন বাসে, শত ভীড়ের ঠেলাঠেলিতে নিজ পকেটটাকে রেখেছেন আগলে বাঁচিয়ে পকেটমার হতে। দেখেছেন, হ্যাঁ দাদা, ঠিকই দেখেছেন- কয়টি ছেলে ঘিরে ধরে তরুণীটিকে ছুঁয়ে দিচ্ছে এখানে সেখানে, নিজের বাপের মাল মনেকরে, মুহুর্তে আপনার টগবগিয়ে ওঠা রক্তচাপটিকে বুঝালেন,- "কেটে পড়ো, নইলে শনি আছে কপালে।" আর কেনইবা নিজেকে জড়াতে যাবেন এসব ঝামেলায়? ছেলেবেলার সব ভুলে খেলেও, বাবার সেই কথাটি ঠিকই মনে মনে পুষে রেখেছেন "বুদ্ধু সেই যে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যায়।" দেখছেন, পেনশনের টাকা পেতে গিয়ে বৃদ্ধ কাকুর পায়ের চটি ক্ষয়ে গেছে দপ্তরে দপ্তরে ধাক্কা খেতে খেতে।
পেনশন পেয়ে কুমারী কন্যার বিয়ে দেবার স্বপ্ন দেখত যে চশমার গ্লাস দুটি, ঘুষের প্রভাবে আজ ভেস্তে গেছে সেসব। ধুলি পড়া ঘোলা গ্লাসের ফাঁক দিয়ে নোনা জলে থৈ থৈ করে ওঠা চোখ দুটি আপনার নজর এড়ায়নি কিছুতেই, বার কয়েক ভেবেছেনও বৈকি, বড় বাবুকে অনুরোধ করে ফাইলটা ছাড়াবেন, কিন্ত ওই যে, দাঁতকপাটি লাগিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভাবছেন- "কেটে পড়ি, নইলে শনি আছে কপালে" আপনার কাদা মাটির নরম মনটিকে শক্তপোক্ত বানিয়েছেন বহুদিন ধরে মেডিটেশন করে করে। না না দাদা, ওসব ভুল করবেন না একদম! বসে থাকুন চুপটি করে, হাতে হাত গুটিয়ে। হেলিয়ে যান শুধু মাথা ক্যাবলা কান্তা হয়ে ক্ষমতাসীনদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে। হাসপাতালের ছাদের আস্তরণ খুলে বাঁশেরগাঁট যতই আপনার দিকে চেয়ে চেয়ে হাসুক, মসজিদ মন্দিরের উন্নয়নের কথা বলে কমিটি যতই চাঁদা তুলুক, আর ওদিকে মাদ্রাসার বা স্টেশনে রাত কাটানো এতীমেরা খাবার অভাবে উপোস রাত কাটাক, দশ বছর বয়সী ছেলে ইউটিউবে পর্ন চালাক, "ছেলে আমার দিনকে দিন হচ্ছে স্মার্ট" একথাটি বলে আপনি চালান হাঁকডাক, মায়ের ওষুধ ভুলে খাবেন আনতে, কিন্তু বউয়ের সোনার বালা ভুললে চলবে! গেস্টের সামনে বাবা এলেই, হয়ে যায় যতো মাথা হেঁট, ওদিকে শ্যালকের প্রশংসায় আপনি পঞ্চমুখ, কারণ চালায় যে সে জাম্বো জেট চলুক না জাল ভোটের কারবার, আপনার কিসের এতো দেন দরবার? কে এলো কে গেলো, আপনার তাতে কি এসে গেলো? ব্যাঙ্কের পর ব্যাঙ্ক ফাঁকা হলো, বিদেশীদের পকেট ভরলো, দুনম্বরি রড-সিমেন্টে গড়া প্লাজার পর প্লাজা ধ্বসে পড়ে, বাতাস ভারী হয়ে ওঠে শ্রমিকদের মৃত্যু মাতমে, আপনি বাপু ছাপোষা মানুষ, যাকগে গোল্লায় এ দেশ, এ সমাজ, কি লাভ এসব শুনে, বলুন? আপনার হাতে মশাই কতো কাজ? তাই ঠিক করেছেন দাদা। একদম মুখ খুলবেন না ভুলেও গোপনে তোলা বিভিন্ন অন্যায়ের ও অপরাধের ছবিগুলি ফেসবুকে পোস্টাবেন না। মনের খায়েশ মনেতেই মেটান, মনকে আর বিপদের মুখে ঠেলবেন না। ভুলে যাবেন না, একবার এক রমণীকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে দৌড়েছিলেন, ছোরা উঁচিয়ে ওরা বলেছিল - "কেটে পড় শালা, নইলে শনি আছে তোর কপালে" সেই থেকেই আপনার সমস্ত টগবগানো রক্ত হিমাগারে রেখেছেন পুরে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Area